ওয়ান ইলেভেন নিয়ে বিএনপির ভেতরে কি প্রতিক্রিয়া হয়েছিল?

fz tech ltd
0

ওয়ান ইলেভেন নিয়ে বিএনপির ভেতরে কি প্রতিক্রিয়া হয়েছিল? 

Article information Author,
সায়েদুল ইসলাম
 Role,বিবিসি নিউজ বাংলা ১০ জানুয়ারি ২০২৩ বিএনপি নেত্রী খালেদা জিয়াছবির উৎস,AFP ছবির ক্যাপশান, বিএনপি চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়া সামরিক বাহিনীর শীর্ষ কর্মকর্তারা ২০০৭ সালের ১১ই জানুয়ারি দুপুরে যখন বঙ্গভবনে প্রবেশ করে রাষ্ট্রপতিকে জরুরি অবস্থা জারি করার জন্য অনুরোধ করেন, বিএনপির নেতাকর্মীরা তখন ছিলেন 

 নানারকম গুজব শুনলেও পর্দার অন্তরালে সেদিন কি ঘটতে যাচ্ছে, সেই সম্পর্কে তাদের কোন ধারণা ছিল না। অক্টোবর মাসে ক্ষমতা থেকে বিদায় নিলেও সেই সময় বিএনপির মনোনীত রাষ্ট্রপতি ইয়াজউদ্দিন আহম্মেদের নেতৃত্বে তৈরি হওয়া উপদেষ্টা পরিষদে বিএনপির বেশ প্রভাব ছিল। নানা সমালোচনা সত্ত্বেও ২২শে জানুয়ারির নির্বাচন আয়োজন বদ্ধপরিকর ছিল রাষ্ট্রপতি ও প্রধান উপদেষ্টা ইয়াজউদ্দিন আহম্মেদের সেই উপদেষ্টা পরিষদ। সেখানে যে বিশাল এক পরিবর্তন ঘটে যাচ্ছে, তা নিয়ে সন্ধ্যা পর্যন্ত দলটি ছিল অনেকটাই অন্ধকারে। বিএনপি নেতাদের প্রতিক্রিয়া দুই হাজার সাত সালের ১১ই জানুয়ারির কয়েকদিন আগে থেকেই সামরিক বাহিনী কোন পদক্ষেপ নিতে পারে, এরকম একটি গুজব শোনা যাচ্ছিল। সারা দেশেই এ নিয়ে জল্পনা-কল্পনা ছিল। যদিও বিএনপি নেতারা সেসব উড়িয়ে দিয়েছেন। সেই সময়ের বিএনপির কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য ছিলেন ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু। তিনি বিবিসি বাংলাকে বলছিলেন, ‘’দুই তিনদিন আগে থেকে একটা কথা শোনা যাচ্ছিল যে, সামরিক বাহিনী ক্ষমতা নিতে পারে। আমি তখনকার মহাসচিব আবদুল মান্নান ভুঁইয়া, সাদেক হোসেন খোকা এবং আও কয়েকজন নেতার সঙ্গে এ নিয়ে কথাও বলেছিলাম। কিন্তু তারা বলেছিলেন, এসব গুজব, এর কোন ভিত্তি নেই।‘’ এগারোই জানুয়ারি দুপুরের দিকে তৎকালীন সেনাপ্রধান জেনারেল মঈন ইউ আহমেদ এবং নবম পদাতিক ডিভিশনের জিওসি জেনারেল মাসুদ উদ্দিন চৌধুরীসহ একদল সেনা কর্মকর্তা দুপুরের দিকে বঙ্গভবনে গিয়েছিলেন। সেখানেই তারা দেশের সার্বিক পরিস্থিতি তুলে ধরে রাষ্ট্রপতিকে জরুরি অবস্থা জারি করার জন্য অনুরোধ করেন। সেদিন বিকেল থেকেই জরুরি অবস্থা জারি করা হয়। ১/১১: পর্দার আড়ালে কী ঘটেছিল? ১১ জানুয়ারি ২০১৮ মৃত্যুর প্রস্তুতি নিয়ে সেদিন বঙ্গভবনে যান জেনারেল মইন ১১ জানুয়ারি ২০২১ সমঝোতা করে যে পরিস্থিতিতে বাংলাদেশ ছেড়েছিলেন তারেক রহমান ১১ সেপ্টেম্বর ২০২০ ইয়াজউদ্দিন আহম্মেদ ইয়াজউদ্দিন আহম্মেদ প্রধান উপদেষ্টার পদ থেকে এবং একজন বাদে অন্য উপদেষ্টারাও সেদিন পদত্যাগ করেন। রাতেই শুরু হয় নতুন উপদেষ্টা কমিটির তৈরির কাজ। কিন্তু এসব প্রক্রিয়ায় বিএনপি বা আওয়ামী লীগ- কোন রাজনৈতিক দলকে রাখা হয়নি। ইয়াজউদ্দিন আহম্মেদ বিএনপির সমর্থনে রাষ্ট্রপতি হলেও সেখানে বিএনপির আর কোন ভূমিকা ছিল না। বিএনপি নেতা ইকবাল হাসান মাহমুদ বলছেন, ‘’আমি তখন নির্বাচনের জন্য পুরো প্রস্তুতির মধ্যে ছিলাম। সেখানে একটা ফোর্স ঢুকে যাবে, ডেমোক্রেসিকে বিপর্যস্ত করবে, সেটা আসলে আমাদের ধারণায় ছিল না। রাজনৈতিক সংকট রাজনীতির মাধ্যমেই সমাধান হওয়ার কথা। আমরা সবাই খুব অবাক হয়েছিলাম।‘’ ‘’আমার দুই-তিনদিন ধরে শুনছিলাম, আর্মি হয়তো টেকওভার করতে পারে। সেটা শোনার পর আমাদের পলিটিক্যাল কলিগদের সঙ্গে আলাপ করেছি। আমরা তো কেউ জানতাম না কি হতে যাচ্ছে। কিন্তু সবাই বলেছেন, এসব গুজব, এর কোন ভিত্তি নেই। তারা তখন শুধু বলেছেন, ওয়েট এন্ড সি,‘’ তিনি বলছেন। ২০০৬ সালের ২৯শে অক্টোবর প্রেসিডেন্টের পাশাপাশি তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রধান উপদেষ্টার দায়িত্ব পালনের জন্য শপথ নেন প্রফেসর ইয়াজউদ্দিন আহমেদ। ছবির উৎস,GETTY IMAGES ছবির ক্যাপশান, ২০০৬ সালের ২৯শে অক্টোবর প্রেসিডেন্টের পাশাপাশি তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রধান উপদেষ্টার দায়িত্ব পালনের জন্য শপথ নেন প্রফেসর ইয়াজউদ্দিন আহমেদ। সেনা কর্মকর্তাদের চাপে জরুরি অবস্থা আগের দিন কুমিল্লায় জনসভায় করছিলেন বিএনপি চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়া। তখন খালেদা জিয়ার সাথে ছিলেন বিএনপির সিনিয়র নেতা খন্দকার মোশাররফ হোসেন। মি: হোসেন বিবিসি বাংলাকে বলছিলেন, "কুমিল্লার পদুয়ার বাজারে রাত নয় থেকে ১১টা পর্যন্ত জনসভা করেছেন। আমরা রাত একটার সময় ঢাকায় ফিরে আসি। ১১ তারিখ বিকেলের দিকে জানতে পারলাম যে সেনাবাহিনী থেকে প্রেসিডেন্ট ভবনে গিয়েছেন এবং সেখানে কিছু একটা হচ্ছে। জাতিসংঘের কিছু একটা চিঠি নিয়ে সেনাপ্রধান এবং নবম পদাতিক ডিভিশনের জিওসি বঙ্গভবনে গিয়ে প্রেসিডেন্টকে দিয়ে জরুরী আইন ঘোষণা করাচ্ছেন।" সেদিনের ঘটনা নিয়ে ‘যেমন দেখেছি ওয়ান ইলেভেন’ নামে একটি বই লিখেছেন লেখক ও সাংবাদিক আহমেদ মুসা। বর্তমানে যুক্তরাষ্ট্র প্রবাসী আহমেদ মুসা সেই সময় বিএনপির কেন্দ্রীয় কমিটির সহ-প্রচার সম্পাদক পদে ছিলেন। সেখানে তিনি উল্লেখ করেছেন, সেনা কর্মকর্তাদের চাপে জরুরি অবস্থা জারির খবর পেয়েই তিনি বিএনপি মহাসচিব আবদুল মান্নান ভুঁইয়ার গুলশানের বাসায় যান পরিস্থিতি বোঝার জন্য। ‘’গিয়ে দেখি ড্রইংরুম ভর্তি মানুষ। মান্নান ভুঁইয়া এর-ওর কথায় মাথা নাড়ছেন, কখনো ডানে-বায়ে, কখনো উপরে-নিচে। এক পাশে কালো চশমা-পরা হারিস চৌধুরী। ...আরও কিছুক্ষণ কথাবার্তার পর সবাই উঠে গেলেন আস্তে আস্তে। ‘’ বিএনপি নেতা ড. আবদুল মঈন খান বিবিসি বাংলাকে বলছিলেন, ‘’আমি ছিলাম নরসিংদীতে আমার নির্বাচনী এলাকায়। সেই সময় চারিদিকে বিভিন্ন রকমের গুজব, আলোচনা এবং অনিশ্চয়তা চলছিল নির্বাচনকে ঘিরে।" "সংবাদটি পেয়েই আমি তাৎক্ষণিকভাবে আমাদের বিএনপির অফিসে টেলিফোন করি। সেখান থেকে আমি বঙ্গভবনের ঘটনার ব্যাপারে জানতে পারি। তখন সবাই প্রায় বিচ্ছিন্ন অবস্থায় ছিল।"

Post a Comment

0Comments
Post a Comment (0)